প্রসংগঃ রাউজানে কবি কাজী নজরুল ইসলাম ।

- আপডেট সময় : ০১:৪২:০২ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৯ মে ২০২৪ ৮২ বার পড়া হয়েছে

রাইটার: মুহাম্মদ নুরুল কবির করিমী। আজ ২৪ মে’ কবি কাজী নজরুল ইসলাম এর জন্ম দিন। আমাদের একজন প্রাক্তন প্রিয়ছাত্র নিশান চৌধুরী আগের লেখায় কমেন্টে অনুরোধ করেছে – রাউজান , রাঙ্গুনিয়াকে নিয়ে লিখতে। তাই কয়েকদিন আগে আমি নজরুল স্মৃতি বিজড়িত ঢেউয়া হাজি বাড়ী গিয়েছিলাম । তার অনুরোধ রক্ষায় ধারাবাহিক কয়েকটি পর্ব লিখতে চেষ্টা থাকবে ইনশাআল্লাহ ।
প্রথমে রাউজানে প্রিয় কবি নজরুলঃ
বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম ।
(জন্মঃ ১৮৯৯-মৃত্যু ১৯৭৬)
১৯৩৩ সালের ৭মে সম্ভবতঃ তিনি চট্টগ্রামের রাউজানে এসেছিলেন । কবি ১৯২৬-১৯৩৩ সালে মোট ৩বার চট্টগ্রামে এসে প্রায় ৭২দিনের মতো অবস্থান করেছিলেন ।
রাউজানে ধুমকেতুর সারথি কবি কাজী নজরুল ইসলামের আগমন ছিল এক ঐতিহাসিক ঘটনা ।
জনাব ইউসুপ চৌধুরীর বাড়িতে নজরুলকে সম্বর্ধনা দেয়া হয়েছিল ।
বৃটিশ বিরোধী মহাবিপ্লবী কবি কাজি নজরুল ইসলাম রাউজানের ঢেউয়া হাজী বাড়ীর কুঁড়ে কাচারী ঘরে দু’রাত্রী ছিলেন ।
আড্ডা-গানে ভরিয়ে দিয়েছিলেন শত শত আগত আবাল-বৃদ্ধ-বনিতার তৃষিত হৃদয় ।
এখানকার তরুন সংঘের কন্ফারেন্স ও শিক্ষা সম্মীলনী অনুষ্ঠানে কবি হৃদয়গ্রাহী এক বক্তৃতা দিয়েছিলেন অতঃপর কবির বিখ্যাত ‘নারি’ কবিতা , ‘সাম্যবাদী’ কবিতা সহ আমাদের ‘রণ সঙ্গীত’
চল চল চল,
উর্ধে গগনে বাজে মাদল,
নিম্নে উতলা ধরণী তল,
অরুণ প্রাতের তরুণ দল
চল রে চল রে চল…
সহ কয়েকটি কবিতা ও গান পরিবেশন করলে মুহুমুহু করতালীর সাথে দর্শক শ্রোতাদের মাঝে অভূতপূর্ব আবেগঘন পরিবেশের দৃশ্যের সৃষ্টি হয়েছিল ।
দু’দিন ব্যাপী বর্ণাঢ্য অনুষ্টান আয়োজন আর সমাবেশে শ্রীবর্ধণ করেছিলেন বৃটিশবিরোধী আন্দোলনের অগ্নিপুরুষ সর্বজনাব বিপ্লবী মাষ্টারদা সূর্যসেন , কবি নবীন সেন , কবি দৌলত কাজি , হামিদ আলীর মতো প্রমূখ বরেণ্যজন ।
সেদিন রাউজানের রায় মুকুট দীঘির পাড়ের বিশাল প্রান্তর ছিল লোকে লোকারন্য । তরুন সংঘের কন্ফারেন্স ও শিক্ষা সম্মিলনী অনুষ্ঠানে আগত কবিকে একনজর দেখা , তাঁর বক্তৃতা শোনা কবির কন্ঠে কবিতা-গান-গজল শুনতে মুহুর্তে হাজার-হাজার, লোকের জনস্রোত নেমেছিল । প্যান্ডেলের বাহিরেও কয়েকগুণ উপছেপড়া দর্শকের ভীড় ছিল ।
সম্বর্ধনা- ভালোবাসার এ অনুষ্ঠানে কবিকে দেখার জন্যে জনস্রোতের শৃঙ্খলা রক্ষায় শেষ-মেষ টিকেটের ব্যবস্থা পর্যন্ত করা হয়েছিল ।
কোন কবিকে এক নজর দেখতে টিকেট প্রয়োজন এটি বিশ্বে এক বিরল ঘটনা !
এ সময় গরু-ছাগল জবাই করে মহাকালের সারথি আমাদের জাতীয় কবি নজরুল ইসলাম ও আগন্তুকদের জন্যে চট্রগ্রামের ঐতিহ্যবাহী মেজ্জানের আয়োজনও করা হয়েছিল ।
দু’দিন ব্যাপী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেছিলেন খান বাহাদুর আবদুল মোমেন (চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার) ও আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ । স্বাগত বক্তব্য রাখেন জ্ঞানতাপস ডঃ এনামুল হক ।
বক্তৃতা করেন সর্বজনাবঃ হাবিবুল্লাহ বাহার , মাহবুবুল আলম , ওহিদুল আলম , কামাল উদ্দীন , আবুল ফজল , নজীর আহমদের মতো ব্যক্তিবর্গ ।
সম্মেলনের আয়োজকবৃন্দের মধ্যে ছিলেন- যথাক্রমেঃ এডভোকেট অলি মিয়া চৌধুরী , ইউনুস চৌধুরী , মোজাহেরুল ইসলাম চৌধুরী , হাফিজুর রহমান , আহমদ চৌধুরী সহ অনেক বরেণ্য ব্যক্তিবর্গ ।
কবি নজরুল ইসলামের “সিন্ধু হিল্লোল” কাব্যগ্রন্থে সে কথার কিছুটা উল্লেখ পাওয়া যায় ।
চট্টগ্রামে অবস্থান কালে কবি বিখ্যাত “চক্রবাক” কবিতা , “শীতের সিন্ধু” , “শিশু যাদুকর” , “আমার ভাঙা নায়ে যাত্রী না লয়” , “গোপন প্রিয়া”, “বাতায়ন পাশে গোবাক তরুর সারী” , “আকাশে হেলান দিয়ে পাহাড় ঘুমায় ঐ” (বিখ্যাত কালজয়ী গান) “কর্ণফুলী , হে সিন্ধু ! বন্ধু মোর” , “মধুমালা”, “সাতভাই চম্পা”র মতো অমূল্য অনেক কবিতা সহ অসংখ্য রচনায় রাউজানকে বহু উর্ধস্থানে আসীন করে ইতিহাস করে যান কবি কাজী নজরুল ইসলাম ।
রাঙামাটিকে নিয়ে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখলেন- অসাধারণ একটা গানঃ
গ্রাম ছাড়া ঐ রাঙামাটির পথ ,
আমার মন ভোলায় রে…
কবি কাজী নজরুল ইসলাম ও অনবদ্য এক সংগীত সৃষ্টি করলেন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি রূপসী রাঙ্গামাটিকে নিয়ে । মনে হয় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সেই গানের জবাবে নজরুল তাঁর হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া নিচের গানটি লিখে দিয়ে গেলেন।
গানঃ-
রাঙামাটির পথে লো…
বাজে মাদল বাজে বাঁশের বাঁশী ,
– বাজে মাদল বাজে বাঁশের বাশী…